চট্টগ্রামে প্রতি মৌসুমে বাড়ছে শিম চাষী
চট্টগ্রামে প্রতি মৌসুমে বাড়ছে শিম চাষী
এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবজির ভান্ডার হিসেবে খ্যাতি অর্জণ করেছে পাহাড়, সমতল ও নদী পরিবেষ্টিত চন্দনাইশ ও দোহাজারী পৌরসভা। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শঙ্খনদ তীরবর্তী চরের মাটি যে কোনো সবজি চাষের জন্য আদর্শ হওয়ায় বছরের ১২ মাস এখানে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন চাষীরা। স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় শঙ্খচরের সবজির চাহিদা অন্যান্য এলাকা থেকে একটু বেশি।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকার সবজির ঘাটতি মেটাতে বড় অবদান রাখে এখানে উৎপাদিত সবজি। অন্যান্য সবজির তুলনায় শিম চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় দোহাজারী পৌরসভায় প্রতি মৌসুমে শিম চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দোহাজারীর শিমের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সৈকত বড়ুয়া জানান, চলতি মৌসুমে দোহাজারী পৌরসভায় ১৬০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি। শিম চাষ করে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রথম পর্যায়ে শিম ও শিমের বিচি বিক্রি করেন এবং পরবর্তীতে বিক্রির জন্য শিমির বিচি শুকিয়ে সংগ্রহ করে রাখেন এবং প্রয়োজনীয় মুহুর্তে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। দোহাজারী পৌরসভার কিল্লাপাড়া, রায়জোয়ারা, লালুটিয়া, দিয়াকুল, চাগাচর, হাফছড়িকুল ও জামিজুরী এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে বিস্তীর্ণ শিম ক্ষেত সবুজের উপর সাদা আর বেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। শিমের ভালো ফলনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন চাষিরা। কিছুটা দুশ্চিন্তাও করছেন তারা। কুয়াশার কারণে শিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু কৃষক আগাম চাষ করা শিম বিক্রিও শুরু করেছেন। দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি সবজি বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি শিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৮০ টাকায়।
আগামী এক মাসের মধ্যে পরিপক্ক শিম পুরোদমে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান একাধিক কৃষক। দোহাজারী পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের মাঈনুল শিমচাষী ৭ কানি জমিতে শিম চাষ করেছেন। জমি প্রস্তুতে শ্রমিকদের মজুরি, বীজ বপন, সারপ্রয়োগ, বালাইনাশক স্প্রে সহ এপর্যন্ত তাঁর প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ক শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৭ কানি জমি থেকে আনুমানিক ৯ লাখ টাকার শিম বিক্রি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত সার প্রয়োগ ও বালাইনাশক স্প্রে করতে আরো আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় শিম চাষ অধিক লাভজনক হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে এবং অধিক কুয়াশা পড়লে ফুল এবং ফল ঝড়ে যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয় চাষীদের।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসাইন জানান, পাহাড়, সমতল ও নদী পরিবেষ্টিত শাক-সবজির চাষাবাদ হয় প্রচুর। বিশেষ করে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ বেশি হওয়ায় চন্দনাইশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। কৃষকদের ইচ্ছা এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতার সমন্বয়ে চন্দনাইশে কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্যময়তা এসেছে। ফলে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির পাশাপাশি শিম চাষও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চন্দনাইশে। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনা হিসেবে সরকারিভাবে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ প্রদান করায় সফল হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স